Online Classes
ষষ্ঠ
শ্রেণি : বাংলা প্রথম
পত্র
সৃজনশীল
প্রশ্ন
গদ্য
: মিনু
বনফুল
১। উদ্দীপকটি পড়ে নিচের
প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও
:
বন্যা
সারা সকাল মিসেস
সালমার বাসায় কাজ
করে, তাকে খালাম্মা বলে ডাকে।
সে মিসেস সালমার
সব কাজে সাহায্য
করার চেষ্টা করে।
দিবা শাখার একটি
স্কুলেও সে পড়ে।
লেখাপড়ায় সে পিছিয়ে
নেই। বন্যা তার
কাজ দিয়ে মিসেস
সালমাকে এমন আপন
করে নিয়েছে যে, মিসেস
সালমাও বন্যাকে পরিবারের অন্য সদস্যের
মতোই মনে করে।
ক. মিনু
কার বাড়িতে থাকত?
উত্তর
: মিনু তার এক দূরসম্পর্কের পিসিমার বাড়িতে
থাকত।
খ. ‘ষষ্ঠ
ইন্দ্রিয়’ বলতে কী বোঝানো
হয়েছে?
উত্তর
: ‘ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়’ বলতে
চোখ, কান, নাক,
জিভ ও ত্বকের বাইরে
বিশেষ কিছুকে বোঝানো
হয়েছে।
বনফুল
রচিত ‘মিনু’ গল্পের
মিনু বোবা আর সামান্য
কালা অর্থাৎ বাক
ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। অনেক
চেঁচিয়ে কথা বললে
তবে শুনতে পায়।
সব কথা শোনার
দরকারও হয় না তার।
ঠোঁট নাড়া আর মুখের
ভাব দেখেই সব বুঝতে
পারে সে। এ ছাড়া
তার আরেকটা ইন্দ্রিয় আছে, যার
সাহায্যে সে এমন
সব জিনিস বুঝতে
পারে, এমন সব জিনিস
মনে মনে সৃষ্টি
করে, সাধারণ বুদ্ধিতে যার মানে
হয় না। ওই ইন্দ্রিয়ের নামই ষষ্ঠ
ইন্দ্রিয়। অর্থাৎ মিনুর
এ বিশেষ অনুভূতিপ্রবণ মনকেই ষষ্ঠ
ইন্দ্রিয় বলা হয়েছে।
গ. অবস্থানগত দিক থেকে
উদ্দীপকের বন্যা ও মিনুর
মধ্যে যে বৈসাদৃশ্য লক্ষ করা
যায়, তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর
: অবস্থানগত দিক থেকে
উদ্দীপকের বন্যা ও মিনুর
মধ্যে কিছু সাদৃশ্য
থাকলেও মানবিক আচরণ
ও আদর-যত্ন
পাওয়ার দিক থেকে
উভয়ের মধ্যে বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।
উদ্দীপকের বন্যা মিসেস
সালমার বাড়িতে কাজ
করলেও দিবা শাখার
স্কুলে পড়ালেখার সুযোগের
সঙ্গে সঙ্গে সেই
পরিবারের একজন সদস্যের
মর্যাদা পায়।
অন্যদিকে বনফুলের ‘মিনু’
গল্পের মা-বাবা
হারা শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী মেয়ে মিনু
আত্মীয়া পিসিমার বাড়িতে
থেকেও আত্মীয়ের মর্যাদা
পায় না। তার
বয়স মাত্র ১০ হলেও
সংসারের সব রকম
কাজই তাকে করতে
হয়। তার পিসে
মশাই যোগেন বসাক
পেট ভাতায় ২৪ ঘণ্টার
চাকরানি পেয়ে খুব
খুশি। বোবা হওয়ায়
সে নীরবে সব কাজ
করে। ভোর ৪টা
সময় উঠে সে কয়লা
ভেঙে উনুন ধরায়।
দুপুরে পিসিমা ঘুমালেও
সে বোলতা বা ভিমরুল
মারে। মোট কথা
উদ্দীপকের বন্যা কাজ
শেষ করে স্কুলপড়ার সুযোগ পেলেও
মিনুর তা নেই।
অবস্থানগত দিক থেকে
উদ্দীপকের সঙ্গে ‘মিনু’
গল্পের মিনুর উপর্যুক্ত বৈসাদৃশ্যই লক্ষ
করা যায়।
ঘ. মিনু
ও বন্যার স্বভাবগত বৈসাদৃশ্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর
: উদ্দীপকের বন্যা সুস্থ-স্বাভাবিক ও মিশুক প্রকৃতির একটি মেয়ে।
সে গৃহকর্মী হলেও
তার কথা ও কাজ
দিয়ে মিসেস সালমাকে
আপন করে নিয়ে
স্কুলে লেখাপড়া করার
সুযোগ পেয়েছে।
অন্যদিকে, ‘মিনু’ গল্পের
মিনু পুরোপুরি সুস্থ
নয়। সে শ্রবণ
ও বাকপ্রতিবন্ধী। মুখে
কথা বলতে না পারলেও
অন্যের ঠোঁট নাড়া
আর মুখের ভাব
দেখে সে সবই
বুঝতে পারে। এ ছাড়া
সে তার অনুভূতি
দিয়ে এমন জিনিস
বুঝতে পারে, এমন
সব জিনিস মনে
মনে সৃষ্টি করতে
পারে, সাধারণ বুদ্ধিতে যার কোনো
মানে হয় না।
একে বলা যেতে
পারে তার ষষ্ঠ
ইন্দ্রিয়। উদ্দীপকের বন্যা
যেমন কথা দিয়ে
মিসেস সালমাকে আপন
করে নিয়েছে, গল্পের
মিনু তেমনি নীরবে
তার কাজগুলোকে আপন
করে নিয়েছে। দৃষ্টির
ভেতর দিয়ে সে সৃষ্টিকে শুধু গ্রহণ
করেনি, নতুন রূপে
নতুন রং আরোপ
করেছে তাতে। প্রকৃতির সঙ্গে সে এক নিবিড়
সখ্যের সম্পর্ক গড়ে
তুলেছে। তাই আকাশের
শুকতারা তার সই, কয়লা
তার শত্রু। হাতুড়ি,
পাথর ঘরের জিনিসপত্র সব কিছুরই
সে নতুন নামকরণ
করেছে। এগুলোর সঙ্গে
ও মনে মনে
কথা বলে।
উপর্যুক্ত বক্তব্য থেকে
বোঝা যায়, উদ্দীপকের বন্যা সুস্থ-স্বাভাবিক বলে তার
কথা ও কাজ দিয়ে
মিসেস সালমার মন জয় করতে
পেরেছে। আর গল্পের
কঠোর পরিশ্রমী মিনু
তার আত্মীয় পিসিমার
মন জয় করতে
পারেনি শুধু বাক-শ্রবণপ্রতিবন্ধী বলে। এটাই
উভয়ের স্বভাবগত বৈসাদৃশ্য।
২। উদ্দীপকটি পড়ে নিচের
প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও
:
পল্লী
প্রকৃতির কোলে বেড়ে
ওঠা বিধবা মায়ের
ডানপিটে সন্তান ফটিক।
নতুনের আকর্ষণে সে ছুটে
আসে কলকাতায় মামাবাড়িতে। কিন্তু মামি
তাকে মোটেও আপন
করে নিতে পারেনি,
বরং অনাবশ্যক ঝামেলা
মনে করে তাকে
স্নেহ থেকে বঞ্চিত
করে। একদিকে প্রকৃতির টান ও মায়ের
ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে মাসির
অবহেলা, অনাদর ও তিরস্কার তার মনকে
পীড়িত করে। ফলে
এ পৃথিবী থেকে
তাকে অসময়ে বিদায়
নিতে হয়।
ক. মিনুর
বয়স কত?
উত্তর
: মিনুর বয়স ১০ বছর।
খ. গৃহপরিচারিকার কাজে মিনুর
ভূমিকা কেমন ছিল—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর
: গৃহপরিচারিকার কাজে মিনু
সুনিপুণ ও আন্তরিক ছিল।
১০ বছর বয়সী
মিনু বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও পিসিমার সংসারের
সব রকম কাজই
সে করত। প্রতিদিন খুব ভোরে
উঠে সে কয়লা
ভেঙে ঘুঁটের মধ্যে
কেরোসিন তেল ঢেলে
উনুন ধরায়। রান্নাঘরের বাসন-গ্লাস
সে আন্তরিকতার সঙ্গে
মাজাঘসা করে। এমনকি
দুপুর বেলা তার
পিসিমা ঘুমালে সে গামছায়
একটা প্রকাণ্ড গেরো
বেঁধে বোলতা বা ভিমরুলের দিকে ঘুরিয়ে
মারে। ওভাবে সব ভিমরুল
বা বোলতা না মরলে
সে ঝাঁটাপেটা করে
মারে। বোবা হওয়ায়
সংসারের সব কাজই
সে নীরবে করে।
তার পিসে মশাই
পেট ভাতায় এমন
সর্বগুণান্বিতা ২৪ ঘণ্টার
চাকরানি পেয়ে খুবই
খুশি হয়েছেন।
গ. উদ্দীপকের ফটিক ও মিনুর
মধ্যে বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর
: উদ্দীপকের ফটিককে তার
মামি অনাবশ্যক ঝামেলা
মনে করলেও সে মিনুর
মতো গৃহকর্মী বলে
বিবেচিত হয়নি। এটাই
বৈসাদৃশ্য।
‘মিনু’
গল্পের পিতৃ-মাতৃহীন
মিনু বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। সে দূরসম্পর্কের পিসিমার বাড়িতে
আত্মীয় হিসেবে নয়, গৃহকর্মী হিসেবে আশ্রয়
পেয়েছে। মিনুকে আশ্রয়
দেওয়ার জন্য বাইরের
লোক যদিও তার
পিসে মশাই যোগেন
বসাককে মহৎ লোক
বলেই জানে, কিন্তু
সর্বগুণান্বিতা মিনু ২৪ ঘণ্টার
চাকরানি হিসেবেই সেই
বাড়িতে থাকে।
উদ্দীপকের ফটিক তার
মামির অনাদর-অবহেলাকে সহজভাবে গ্রহণ
করতে পারেনি বলে
মরমে মরে অসময়ে
পৃথিবী থেকে বিদায়
নিয়েছে, কিন্তু গল্পের
মিনু শুধু গৃহকর্মেই অখণ্ড মনোযোগ
নয়, প্রকৃতির সঙ্গেও
মিতালি পাতিয়েছে। শুকতারাকে সই, কয়লা
ও মিটসেফকে শত্রু,
রান্নাঘরের বাসনকে তার
বন্ধু বানিয়ে নিজের
আলাদা জগৎ তৈরি
করেছে। তাই বলা
যায়, উদ্দীপকের ফটিক
তার মনের বিরুদ্ধ
পরিবেশের সঙ্গে খাপ
খাওয়াতে পারেনি বলে
অকালে পৃথিবী থেকে
বিদায় নিয়েছে আর গল্পের
মিনু আত্মীয় হয়েও
বিরুদ্ধ পরিবেশে নিজেকে
গৃহকর্মী হিসেবে মানিয়ে
নিতে পেরেছে—এটাই উভয়ের
মধ্যে বৈসাদৃশ্য।
ঘ. ‘ফটিকের
পরিণতি আর মিনুর
পরিণতি ভিন্ন’—উক্তিটি বিচার
করো।
উত্তর
: উদ্দীপকের ফটিক যে প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করতে
পারেনি, মিনু তা পেরেছে
বলে উভয়ের পরিণতি
ভিন্ন—মন্তব্যটি যথার্থ।
উদ্দীপকের ফটিক নতুনের
আকর্ষণে মামাবাড়িতে এসে
মামির অনাদর, অবজ্ঞা
পেয়ে অসময়ে পৃথিবী
ছেড়ে চিরবিদায় নেয়।
অন্যদিকে ‘মিনু’ গল্পের
১০ বছরের অনাথ,
বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী মিনু
তার দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে গৃহীত
হয় পেট ভাতায়
২৪ ঘণ্টার চাকরানি
হিসেবে; কিন্তু সেই
জীবনকে মিনু সহজভাবে
গ্রহণ করতে পেরেছিল
শুধু নিজের ভেতরে
একটা আলাদা জগৎ সৃষ্টি করতে
সক্ষম হয়েছিল বলে।
প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি
পাতিয়ে সে শুকতারাকে সই, কয়লা
ও মিটসেফকে শত্রু,
রান্নাঘরের বাসনকে বন্ধু
বানিয়ে তাতে নতুন
রূপে নতুন রং আরোপ
করে আনন্দে ডুবে
থাকে। হলদে পাখি
দেখে তার মনে
পুলক জাগে। পাশের
বাসার কোনো এক প্রবাসী
পিতার আগমন লক্ষ
করে সে মনে
করে একদিন তার
বাবাও ফিরে আসবে।
পিতার জন্য মনে
মনে অপেক্ষা করে
সে। একদিন সত্যিই
যখন হলদে পাখি
কাঁঠালগাছের সরু ডালে
বসে, তখন তার
ধারণা হয়, তার
বাবা নিশ্চয়ই এসেছে।
সে জ্বর গায়েই
বাইরে ছুটে যায়—তার
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান
ঘটাতে।
উপর্যুক্ত বক্তব্য থেকে
এটাই প্রতীয়মান হয় যে, প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করতে
পারেনি বলে উদ্দীপকের ফটিককে অকালে
মৃত্যুকে বরণ করে
নিতে হয়েছে আর গল্পের
মিনু তার স্বপ্ন
ও কল্পনা দিয়ে
তা অতিক্রম করতে
পেরেছে বলে উভয়ের
পরিণতি হয়েছে ভিন্নতর।
No comments:
Post a Comment