Wednesday, March 9, 2016

HSC: Preparation.



পাঠ প্রস্তুতি

এইচএসসি প্রস্তুতি : বাংলা দ্বিতীয় পত্র

 Online Classes.

বাগর্থতত্ত্ব

প্রশ্ন : বাগর্থ বলতে কী বোঝো? যৌক্তিক আলোচনা করো।

অথবা, শব্দার্থতত্ত্ব বা বাগর্থতত্ত্বের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তর : ভাষাবিজ্ঞানের বাগর্থতত্ত্ব ব্যাকরণের একটি অধ্যায়। আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানীরা এই বিজ্ঞানের মূল যে কর্তব্য নির্দেশ করেন তা হলো, কিভাবে এক ভাষার মানুষ পরপর ধ্বনি সাজিয়ে অর্থ প্রকাশ করে, তারই রহস্য উদ্ঘাটন বা বর্ণনা। ব্যাকরণের মূল আলোচ্য বিষয় চারটি : ধ্বনি, শব্দ, বাক্য, অর্থ। ভাষার ধ্বনিগুলো নির্মাণ করছে শব্দ; কয়েকটি শব্দ মিলে গঠিত হচ্ছে বাক্য। তারপর বাক্য প্রকাশ করেছে সুনির্দিষ্ট অর্থ।

ভাষাবিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, ধ্বনি থেকে শব্দগঠন, শব্দ থেকে বাক্যনির্মাণ, বাক্য থেকে অর্থ প্রকাশএর প্রত্যেকটি পর্যায় সুনির্দিষ্ট নিয়ম দ্বারা পরিচালিত হয়। বক্তার মুখনিঃসৃত ধ্বনিতে এসব সুনিয়ন্ত্রিত নিয়মের মাধ্যমে শ্রোতার মনে সুনির্দিষ্ট অর্থবোধ ঘটানোকে ভাষাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বাগর্থ বলে।

ভাষা সৃষ্টিতে বাক্যের ভূমিকা প্রধান হলেও ভাষার প্রধান কাঠামো গড়ে ওঠে শব্দকে ভিত্তি করে। ভাষার প্রাণ হচ্ছে শব্দের অর্থ। ভাষার পরিবর্তন যেমন তার বাহ্যিক আঙ্গিক পরিবর্তন, তেমনি তার ভেতরের প্রাণশক্তি অর্থেরও পরিবর্তন। ভাষাতত্ত্বে বা ভাষাবিজ্ঞানে শব্দ তথা বাক্যের অর্থ তার পরিবর্তন-সংক্রান্ত যে বিচার-বিশ্লেষণ, আলোচনা ব্যাখ্যাতাকে শব্দার্থতত্ত্ব বা বাগর্থতত্ত্ব বলা হয়। মূলত আক্ষরিক অর্থ নিয়েই বাগর্থতত্ত্বের কারবার। এই অর্থ বোঝানোর জন্য স্বভাষী শ্রোতাকে বিশেষ কোনো চিন্তা বা বিচার করতে হয় নাকেবল রূপক, দ্ব্যর্থকতা ইত্যাদি ক্ষেত্র ছাড়া। আক্ষরিক অর্থ খুঁজতে গিয়ে যেসব সমস্যা (শব্দের দ্ব্যর্থকতা, গৌণ অর্থে প্রয়োগ ইত্যাদি) হয়, সেগুলোর নিরসন কিভাবে হবে, বাগর্থতত্ত্ব সাধারণভাবে তারই সূত্র সন্ধান করে।



প্রশ্ন : শব্দের অর্থ পরিবর্তন বলতে কী বোঝো? উদাহরণসহ আলোচনা করো।

অথবা উদাহরণসহ শব্দার্থ পরিবর্তনের যৌক্তিক আলোচনা করো।

উত্তর : শব্দের অর্থ হচ্ছে ভাষার প্রাণ। সব ভাষার শব্দসম্পদের একটা স্বকীয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যের মধ্য দিয়ে সেই ভাষার শব্দসম্পদের ঐশ্বর্য সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। ভাবপ্রকাশের জন্য আমরা নানা ধরনের শব্দ ব্যবহার করি, কখনো কখনো একই শব্দ বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করে থাকি। প্রায়ই দেখা যায় যে শব্দের মূল অর্থ পরিবর্তিত হয়ে নতুন অর্থ গ্রহণ করেছে। কোনো কোনো সময়ে বাক্যে একটি অর্থ মুখ্য হয়ে ওঠে, অন্য অর্থ গৌণ হয়ে দাঁড়ায়। শব্দসম্পদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলোতা সব সময় এক রকম থাকে না। উচ্চারণের মাধ্যমে যেমন শব্দের পরিবর্তন ঘটে, তেমনি অর্থের মাধ্যমে তা বদলে যায়। এই পরিবর্তন বা বদলের মধ্য দিয়ে শব্দের গতিশীলতা প্রমাণিত হয় তা নতুনরূপে যুগোপযোগী হয়ে ওঠে। এভাবেই শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে।

শব্দের অর্থের পরিবর্তন কোনো একক কারণে ঘটে না, এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে। যেমনআকাশবাণীএকটি সংস্কৃত শব্দ। এর অর্থ হচ্ছেদৈববাণী সংস্কৃত ভাষার অন্যতম প্রধান কবি তুলসীদাসের যুগেও শব্দটির এই অর্থ ছিল।রামচরিত মানসগ্রন্থে আছেভৈঁ আকাশবাণী ত্রেহি কালাঅর্থাৎ, ওই সময় আকাশবাণী হলো। এখন আর সেই অর্থ নেই। বর্তমানেআকাশবাণীশব্দের অর্থ পরিবর্তিত হয়েরেডিও বা বেতারনামে স্বীকৃত হয়েছে।মন্দিরশব্দটির প্রাচীন অর্থ ছিলঘর’, বর্তমানে এর পরিবর্তিত অর্থ দাঁড়িয়েছেদেবতার ঘর রকমহাতশব্দটি। এটি নানা অর্থে ব্যবহূত হয়। যেমন : হাত পাকা, ‘অভিজ্ঞ’, হাত টান—‘চোর’, হাতের পাঁচ—‘শেষ সম্বল’, হাতেখড়ি—‘বিদ্যারম্ভপ্রভৃতি। তাহলে প্রমাণিত হলো যেআকাশবাণী’, ‘মন্দিরহাতশব্দের অর্থ গোড়ায় যে রকম ছিল, পরে আর সে রকম থাকেনি, পরিবর্তনের মাধ্যমে অন্য রকম হয়ে গেছে। তা ছাড়াহাতশব্দটি তার মূল অর্থের পাশাপাশি বিচিত্র অর্থ প্রকাশ করছে। শব্দের অর্থ বদলে যাওয়ার এই ধারারই নাম অর্থ পরিবর্তন। আধুনিক ভাষাবিজ্ঞান বা উচ্চতর বাংলা ব্যাকরণে শব্দের অর্থ পরিবর্তন তাই একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।



অভিজ্ঞতা বর্ণনা

প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন মহাস্থানগড় দেখার অভিজ্ঞতা

ঘুরে এলাম বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার ঐতিহাসিক নিদর্শন মহাস্থানগড়। এই ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন পুরাকীর্তি মহাস্থানগড় বগুড়া জেলার ইতিহাস প্রসিদ্ধ করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত।

আয়তাকার ধ্বংসস্তূপটি উত্তর-দক্ষিণে ১৫০০ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৪০০ মিটার বিস্তৃত। সমতলভূমি থেকে ছয় মিটার উঁচু প্রতিরক্ষা প্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত। ১৮৭৯ সালে স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম এই ধ্বংসাবশেষকে প্রাচীন পুণ্ড্রনগরের ধ্বংসাবশেষ বলে শনাক্ত করেন। এখানে ব্রাহ্মীলিপিতে একটি শিলালিপিতে খোদিত আছেপুণ্ডনগল’ (পুণ্ড্রনগর), যা থেকে প্রমাণিত হয় যে নগরটি সম্ভবত মৌর্যদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। রাজা পরশুরামের শাসনামলে মহাস্থানগড় সমৃদ্ধি লাভ করে।

মহাস্থানগড়ের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে প্রাচীন সভ্যতার বহু নিদর্শন। প্রায় তিন হাজার বছর আগে থেকে শুরু করে মুসলিম যুগের শেষ পর্যন্ত অসংখ্য নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। পুরাকীর্তিসহ এসব নিদর্শন নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, মহাস্থানগড় ইতিহাসপ্রসিদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ঘুরে ঘুরে দেখলাম বৈরাগীর ভিটা, গোবিন্দ ভিটা, ভাসুবিহার, বিহার ধাপ, মুণির ঘুন, খোদার পাথর ভিটা, মানকালীর প্রাসাদ ঢিবি জীয়নকুণ্ড, লখিন্দরের মেধ, মঙ্গলকোট ইত্যাদি নিদর্শন। বিভিন্ন সময়ে খননকাজের মধ্যে পাওয়া প্রত্নসম্পদের মধ্যে রয়েছে ভাঙা টালি, ইটের টুকরা, রিংস্টোন, ব্রোঞ্জের প্রদীপ, ছাঁচে ঢালা মুদ্রা, ফলকচিত্র, পোড়ামাটির জীবজন্তু, পত্র থালা, কাপ, গ্লাস, গামলা ইত্যাদি। এসব দেখে তখনকার সভ্যতা যে কতটা সমৃদ্ধ ছিল, তা অনুমান করা যায়। আর এই সমৃদ্ধ প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন দেখে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে আমি ফিরে এলাম ঢাকায়।



গ্রামে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

আমার জন্ম শহরে মামার বাড়িতে এবং বড় হয়েছি শহরতলিতে। ফলে গ্রামে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা আমার ছিল না। নানাজনের মুখে গ্রামের গল্প শুনেছি। শুনেছি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা। কিন্তু নিজের চোখে দেখা হয়নি। সুযোগটা হঠাৎ করেই এসে গেল এক সহপাঠীর মাধ্যমে। তার বাড়ি যশোরে, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান সাগরদাঁড়ি গ্রামে। সহপাঠী নাজমুল আমাকে নিয়ে গিয়েছিল।

সকালেই নাজমুলের সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম গ্রাম দেখতে। গ্রামে নাজমুলের অনেক বন্ধুবান্ধব। এর মধ্যে আমাদের সঙ্গী হলো দুজন। একজন আমাকে গাছ থেকে পেয়ারা পেড়ে দিল। আরেকজন খাওয়াল ডাব। বেশ জমে উঠল আমাদের গ্রাম দেখার আনন্দ। প্রথমে মধুসূদন দত্তেরকপোতাক্ষ নদদেখে নিলাম। কবিতার নদকে দেখে নিলাম বাস্তব চোখে। তারপর হাঁটলাম গ্রামের রাস্তায়। সারি সারি গাছপালার দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। গ্রামের চাষিরা হাল-বলদ নিয়ে অনেকেই মাঠে যাচ্ছেন, কেউ বা পাকা ফসল কাটছেন, কেউ মাছ ধরছেন পুকুরে। এসব দেখতে দেখতে এসে পৌঁছালাম মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়িতে। গ্রামের মানুষের কাছে এখনো তাঁর সম্মান অনেক। কাছেই একটা বড় বিল আছে। আগামীকাল তা দেখতে যাব।

পরের দিন আমরা বিল দেখতে বের হলাম। দিগন্তবিস্তৃত বিল দেখে মনে হলো একটি উপসাগর। হরেক রকম পাখি আর হাঁস বিলের সৌন্দর্যকে অপরূপ করে তুলেছে। শীতকালে নাকি এই বিলে অসংখ্য অতিথি পাখির আগমন ঘটে। আমরা নৌকায় ঘণ্টাখানেক ঘুরলাম। তারপর গ্রামের পথে হাঁটতে হাঁটতে ফিরে এলাম বাড়িতে। এমন মধুর অভিজ্ঞতা আমার জীবনে এই প্রথম, সত্যি অপূর্ব।



সুন্দরবণে একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

আরণ্যক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন। এই সুন্দরবনের নিবিড় অরণ্যের সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ এসেছিল আমার জীবনে। একবার বেড়াতে গিয়েছিলাম খুলনায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে। পরদিন জাহাজে করে হাজির হলাম সুন্দরবনে। বনের সৌন্দর্য দেখার জন্য একাকী বের হয়ে পড়লাম। যতই সামনে অগ্রসর হচ্ছি, ততই ঘন হয়ে আসছিল বনভূমি। পাখির কলকাকলি শুনতে পাচ্ছি খুব কাছ থেকে। একদল হরিণ দূর থেকে আমাকে দেখে মুহূর্তের জন্য দাঁড়িয়েছিল। তারপর দ্রুত ছুটে সরে গেল গভীর অরণ্যের ভেতর। আমি দেখছিলাম হরিণের দলটিকে। তারা আমার দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলেও আমি বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে রইলাম। চোখে পড়ল বানরজাতীয় অসংখ্য প্রাণী, হঠাৎ শুরু হলো তাদের ছোটাছুটি। নানা রকম শব্দ করতে করতে তারা এক গাছ থেকে আরেক গাছে লাফিয়ে পড়ছে।

আমি কিছু একটা রহস্যের গন্ধ পেলাম। ভয় ভয় লাগছিল। বহুদূর থেকে একটা শব্দ এবং ছোট ছোট গাছপালার লুটোপুটির শব্দ কানে এলো। মনে পড়ল রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কথাআশপাশেই থাকতে পারে। আমি দ্রুত স্থান পরিবর্তন করলাম। হরিণের দলটিকে দেখে আমার ভাবনায় একটি বিষয় উঠে এলোবনের মধ্যে এরা কত অসহায়। জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ। যেকোনো সময় এরা কুমির বাঘের খাদ্যে পরিণত হতে পারে। শিকারির বন্দুকের নল তো আছেই। ধরনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে এলাম বাসায়। সুন্দরবনের সৌন্দর্য যেমন মনোমুগ্ধকর, পরিবেশও তেমনি ভয়ংকর।

No comments:

Post a Comment