সৃজনশীল প্রশ্ন
অষ্টম শ্রেণি : বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
Online Classes
ঔপনিবেশিক যুগ ও বাংলার
স্বাধীনতাসংগ্রাম
উদ্দীপক পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর
উত্তর দাও :
বিশাল আয়তনের শহর ‘ক’।
এ শহরের এক প্রান্তে মো. ওয়াজেদ, তানিয়া ও নাঈমা বসবাস করে। দূরত্বের কারণে তাদের এলাকায়
সব সুযোগ-সুবিধা পৌঁছায় না। প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য কর্তৃপক্ষ পুরো শহরটিকে দুটি
ভাগে ভাগ করে। কিন্তু ‘ক’ শহরটির কেন্দ্রস্থানের বাসিন্দা পরাগ দাস, মনীষা বর্মণ, অর্পিতা
রায় প্রমুখ ব্যক্তির মতে নাগরিকদের সুবিধা নয়, কর্তৃপক্ষের শহরটি বিভক্তির পেছনে অন্য
উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
(ক) কত সালে ভাস্কো দা
গামা দক্ষিণ ভারতের কালিকট বন্দরে পৌঁছেন?
(খ) ইউরোপের যুদ্ধরত দেশগুলোর
মধ্যে সম্পাদিত শান্তিচুক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
(গ) উদ্দীপকে আলোচিত ঘটনার
সঙ্গে কোন ঐতিহাসিক ঘটনার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
(ঘ) তুমি কি মনে করো দুটি
সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে উক্ত ঐতিহাসিক ঘটনার প্রতিক্রিয়া ছিল বিপরীতমুখী। তোমার
মতামত দাও?
উত্তর :
(ক) ১৪৯৮ সালে ভাস্কো দা
গামা দক্ষিণ ভারতের কালিকট বন্দরে পৌঁছেন।
(খ) ইউরোপের যুদ্ধরত দেশগুলোর
মধ্যে সম্পাদিত শান্তিচুক্তির নাম হলো ওয়েস্টফালিয়ার চুক্তি, ১৬৪৮ সালে ইউরোপের যুদ্ধরত
বিভিন্ন দেশের মধ্যে এই শান্তিচুক্তিটি সম্পাদিত হয়। ওয়েস্টফালিয়ার চুক্তিটি সম্পাদিত
হওয়ার পর শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলে বিভিন্ন ইউরোপীয় জাতি নতুন উদ্যমে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে
বেরিয়ে পড়ে। এদের অধিকাংশের লক্ষ্য ছিল ভারতবর্ষ।
(গ) উদ্দীপকে আলোচিত ঘটনার
সঙ্গে যে ঐতিহাসিক ঘটনার সাদৃশ্য রয়েছে তা হলো বঙ্গভঙ্গ। পূর্ব বাংলা, পশ্চিম বাংলা,
বিহার, ওড়িশা, ছোট নাগপুর ও আসাম নিয়ে গঠিত হয়েছিল বাংলা প্রেসিডেন্সি। একজন গভর্নরের
পক্ষে এত বড় প্রদেশ শাসন করা সত্যিই দুরূহ ব্যাপার ছিল। কলকাতাকেন্দ্রিক ইংরেজ শাসকদের
পক্ষে দূরবর্তী অঞ্চলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা কঠিন ছিল। এ কারণে পূর্ব বাংলা, পশ্চিম বাংলা,
বিহার ওড়িশার উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। ইংরেজ ভাইসরয় লর্ড কার্জন ১৯০৩ সালে প্রস্তাব রাখেন
যে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দুই ভাগে ভাগ করা হবে বৃহত্তর বাংলাকে। তাই লর্ড কার্জন
১৯০৫ সালে উত্তর ও পূর্ব বাংলাকে আসামের সঙ্গে যুক্ত করে পূর্ববঙ্গ এবং আসাম নামে নতুন
প্রদেশ গঠন করে। নতুন প্রদেশের ছোট লাট হলেন ব্যামফিল্ড ফুলার। সরকারি সিদ্ধান্তে যুক্তি
থাকলেও কলকাতাকেন্দ্রিক শিক্ষিত বাঙালিদের অনেকেই সরকারি সিদ্ধান্তে সন্দেহ প্রকাশ
করে। উদ্দীপকে ‘ক’ শহরটির দূরবর্তী অঞ্চলে প্রশাসনিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছায় না। প্রশাসনিক
সুবিধার জন্য পুরো শহরটি দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ‘ক’ শহরটির কেন্দ্রের অনেক বাসিন্দা
কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। সুতরাং পুরো বিষয়টির ১৯০৫ সালের ঐতিহাসিক
বঙ্গভঙ্গের সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে।
(ঘ) উদ্দীপকে ঐতিহাসিক
ঘটনাটি হলো—১৯০৫ সালের ঐতিহাসিক বঙ্গভঙ্গ। আমার মতে, মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে ওই
ঐতিহাসিক ঘটনার প্রতিক্রিয়া ছিল বিপরীতমুখী।
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের
ফলে পূর্ববঙ্গ ও আসাম নিয়ে গঠিত নতুন প্রদেশকে মুসলমান সম্প্রদায় আশীর্বাদ বলে স্বাগত
জানায়। পূর্ব বাংলার অধিকাংশ মানুষ ছিল মুসলমান। তাই মুসলিম নেতারা ভেবেছিলেন, নতুন
প্রদেশ হলে অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের উন্নতি সাধন এবং নিজেদের স্বার্থ
সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায় বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করেন। এ কারণে
দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। কংগ্রেসের বড় নেতাদের অধিকাংশ ছিল হিন্দু
সম্প্রদায়ের। তাঁরা মুসলমানদের সঙ্গে পরামর্শ না করে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করেন। ফলে
মুসলমানরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য নিজেদের একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুভব
করে। এই লক্ষ্যে ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ নামে রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গভঙ্গের
ফলে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।
বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করা থেকে
শাসকদের বিরত করার জন্য বাঙালি হিন্দুরা একের পর এক চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। বঙ্গভঙ্গ
রদ করার জন্য হিন্দুরা কতগুলো আন্দোলন করে। এগুলো হচ্ছে স্বদেশী আন্দোলন, বয়কট আন্দোলন,
স্বরাজ ও সশস্ত্র আন্দোলন।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে
বলা যায়, মুসলমান এবং হিন্দুদের মধ্যে বঙ্গভঙ্গের প্রতিক্রিয়া ছিল বিপরীতমুখী।
No comments:
Post a Comment