পঞ্চম শ্রেণি : বাংলা
Online Classes
রচনা
এই দেশ এই মানুষ
ভূমিকা : ‘সার্থক জনম মাগো, জন্মেছি এই দেশে।’ কবির এ কথার অর্থ দাঁড়ায়,
আমাদের সৌভাগ্য
যে আমরা এ দেশে জন্মেছি। আমরা বাঙালি। তবে আমাদের দেশে যেমন রয়েছে প্রকৃতির বৈচিত্র্য, তেমনি রয়েছে মানুষ ও ভাষার বৈচিত্র্য।
বিভিন্ন ভাষাভাষী
: বাংলাদেশের প্রায় সব লোক বাংলায় কথা বলে। তবে পার্বত্য জেলাগুলোতে রয়েছে ক্ষুদ্র
জাতিসত্তার লোকজন। এদের কেউ চাকমা,
কেউ মারমা,
কেউ মুরং, কেউ তঞ্চঙ্গা
ইত্যাদি। এ ছাড়া রাজশাহী
ও জামালপুরে রয়েছে সাঁওতাল
ও রাজবংশীদের বসবাস। তাদের রয়েছে নিজ নিজ ভাষা।
ধর্ম : বাংলাদেশে রয়েছে নানা ধর্মের লোক। মুসলমান,
হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান। সবাই মিলেমিশে
বসবাস করছে যুগ যুগ ধরে।
পেশা : বাংলাদেশের এই যে বিচিত্র মানুষ,
তাদের পেশাও বিচিত্র ধরনের। কেউ জেলে, কেউ কুমার, কেউ কৃষক। কেউ আবার কাজ করে অফিস-আদালতে। একজন তার কাজ দিয়ে সাহায্য
করছে অন্যজনকে। গড়ে তুলছে এই দেশ।
উৎসব : আমাদের দেশে আছে নানা ধরনের উৎসব। মুসলমানদের রয়েছে দুটি ঈদ—ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। হিন্দুদের দুর্গাপূজাসহ আছে নানা উৎসব আর পার্বণ। বৌদ্ধদের আছে বৌদ্ধ পূর্ণিমা। খ্রিস্টানদের আছে ইস্টার সানডে আর বড়দিন। এ ছাড়া রয়েছে পহেলা বৈশাখে নববর্ষের
উৎসব। রয়েছে রাখাইনদের সাংরাই ও চাকমাদের বিজু উৎসব।
পোশাক
: বাংলাদেশের মানুষের পোশাকও
ভিন্ন ভিন্ন ধরনের,
ভিন্ন ভিন্ন ধাঁচের। কেউ পরে লুঙ্গি,
কেউবা ধুতি। কেউ পাঞ্জাবি পরে আবার কেউ পরে শার্ট।
দর্শনীয়
স্থান : এ দেশে দেখার মতো অনেক জায়গা রয়েছে। যেমন রয়েছে নদী, পাহাড়, সমুদ্রের
বেলাভূমি, তেমনি রয়েছে সুন্দরবনের মতো বৈচিত্র্যময় বন, মাধবকুণ্ডের ঝরনা, খানজাহান
আলীর ষাট গম্বুজ
মসজিদ ইত্যাদি। এসব দর্শনীয় স্থান দেশি-বিদেশি
পর্যটকসহ সবাইকে মুগ্ধ করে। দেশকে তাই আমাদের ঘুরে ঘুরে দেখা দরকার।
উপসংহার
: দেশ মানে এর মানুষ, নদী, আকাশ, প্রান্তর, পাহাড়, সমুদ্র
এসব। দেশ হলো জননীর মতো। জননী যেমন স্নেহ-মমতা দিয়ে আমাদের আগলে রাখেন,
দেশও তেমনি তার আলো-বাতাস, সম্পদ দিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে
রাখে। তাই এ দেশকে আমরা ভালোবাসি,
ভালোবাসব।
বাঘ : বাংলাদেশের জাতীয় পশু
ভূমিকা
: বাংলাদেশের দক্ষিণে রয়েছে প্রকৃতির অপার সম্ভার
সুন্দরবন। সমুদ্রের কোলঘেঁষে গড়ে উঠেছে এই বিশাল বন। এখানে রয়েছে যেমন প্রচুর গাছপালা,
কেওড়া ও সুন্দরী
গাছের বন, তেমনি রয়েছে নানা প্রাণী
ও জীবজন্তু। আর এই প্রাণীদের মধ্যে বাঘ বা রয়েল বেঙ্গল
টাইগারের আবাসস্থলও এই সুন্দরবন। এই বাঘ দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি আবার ভয়ংকর।
আকৃতি
: বাঘ কারনিভোরা (Carnivora) বর্গের ফেলিডা
(Felidae) গোত্রের বৃহত্তম বনবিড়াল। এটি বাংলাদেশের জাতীয় পশু। বাঘের মাথা গোলাকার ও বেশ বড়। এর চোখের মণি গোল এবং চোখ দুটি উজ্জ্বল
হওয়ায় রাতের বেলায় তা জ্বল জ্বল করে বলে অন্ধকারেও বাঘ স্পষ্ট দেখতে পায়। এদের পায়ের তলায় তীক্ষ্ম ও ধারালো
নখ থাকে। তা ছাড়া পায়ের তলায় নরম মাংসপিণ্ড আছে, যার ফলে এরা নীরবে চলাফেরা করতে এবং সহজে শিকার ধরতে পারে। এদের গায়ের চামড়া খুবই শক্ত ও ঘন লোমে ঢাকা। বাঘের পেছনের
পায়ের জোর বেশি বলে লাফ দিয়ে এরা অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। বাঘের দৈর্ঘ্য ১৪০ থেকে ২৮০ সেমি, লেজ ৬০ থেকে ১০০ সেমি এবং কাঁধ পর্যায়ে উচ্চতা
৯৫ থেকে ১১০ সেমি।
রং : বাঘের গায়ের রং গাঢ় হলুদ থেকে লালচে হলুদ। তাতে লম্বা কালো ডোরা। এই ডোরা পেছন ও উরুতেই
বেশি থাকে। পেটের দিক সাদাটে। হলুদ রঙের লেজে অনেকগুলো কালো বেড় থাকে। বাঘের বাচ্চাও
ডোরাসহ জন্মে। এই ডোরাকাটা দাগের কারণে অনেক দূর থেকে বাঘকে চেনা যায়।
কোথায় দেখা যায় : বাঘ অত্যন্ত অভিযোজন দক্ষ জন্তু। উষ্ণ মণ্ডলীয়
অরণ্য, ম্যানগ্রোভ জলাভূমি, পত্রমোচী
বন সর্বত্রই এরা বসবাস করতে পারে। এমনকি রাশিয়ার তুষার ঢাকা হিমশীতল
দূর প্রাচ্যেও বাঘ বসবাস করে। সুন্দরবনে বাঘের দেখা মেলে। চিড়িয়াখানায়ও এ
বাঘ দেখা যায়।
আবাসস্থল
: জলবায়ু, আবহাওয়া, গাছপালা,
বৃক্ষলতা ইত্যাদি প্রাকৃতিক পরিমণ্ডলেই দেশের প্রাণীকুল জীবনধারণ করে থাকে। প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে এরা মিলেমিশে থাকে। বাঘের আটটি উপপ্রজাতির মধ্যে পাঁচটি এখনো জীবিত। রয়েল বেঙ্গল টাইগার আছে বাংলাদেশের সুন্দরবনে। এ ছাড়া ভারত, ভুটান, নেপালসহ পৃথিবীর
অনেক দেশেই এর আবাসস্থল রয়েছে।
খাদ্যাভ্যাস : বাঘ মাংসাশী প্রাণী। এরা সাধারণত গরু, মহিষ, হরিণ, বুনো শূকর, সজারু ইত্যাদি জীবজন্তু শিকার করে। সুযোগ পেলে এরা মানুষও খায়। বড় আকারের একটি বাঘের দৈনিক মাংসের চাহিদা গড়ে ৮-৯ কেজি।
উপসংহার
: সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল
টাইগার বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ। দিন দিন বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। একে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
No comments:
Post a Comment