এইচএসসি
প্রস্তুতি : বাংলা দ্বিতীয় পত্র
ক্ষুদে
গল্প ও সংলাপ রচনা
Online Classes
ক্ষুদে
গল্প
শিরোনাম
: ইঁদুরের বৈঠক
লোকালয়ের
কাছেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি পাহাড়। সেই পাহাড়ের গুহায় বাস করত একদল
ইঁদুর। পাহাড়ের গুহায় কোনো খাবার পাওয়া যেত না বলে তাদের লোকালয়ে যেতে হতো। কিন্তু
সেখানে থাকত একটি হুলো বিড়াল। বিড়ালের অত্যাচারে ইঁদুররা লোকালয় থেকে খাদ্য জোগাড়
করতে না পেরে একসময় খুব অতিষ্ঠ হয়ে উঠল। বাঁচার একটা উপায় বের না করলে ইঁদুরের বংশ
ধ্বংস হয়ে যাবে। বিড়ালের হাত থেকে কিভাবে বাঁচা যায়, এ বিষয়ে
ইঁদুরদের একটা বৈঠক বসল। বৈঠকে অনেক ইঁদুরের সমাবেশ ঘটল। বাঁচার উপায় হিসেবে
অনেকেই নানারকম পরামর্শ ও প্রস্তাব দেয়। কিন্তু কারো প্রস্তাবই সভাপতির আসনে বসা
বৃদ্ধ ইঁদুরের পছন্দ হলো না।
অবশেষে
এক বিজ্ঞ ইঁদুর অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বুক ফুলিয়ে বলল—আমি বলি কি, ওই হুলো বিড়ালের গলায় একটা ঘণ্টা বেঁধে
দেওয়া হোক, তাহলে ঘণ্টার আওয়াজ শুনেই আমরা সাবধান হতে
পারব। এই প্রস্তাবে বৈঠকে উপস্থিত সব ইঁদুরই হাতে তুড়ি বাজিয়ে রাজি হয়ে গেল।
বৈঠকের সভাপতি বৃদ্ধ ইঁদুর এতক্ষণ বসে বসে সবার পরামর্শ শুনছিল। কিন্তু এবার আর
কিছু না বলে পারল না। এবার সে বলল, আমার প্রবীণ বিজ্ঞ বন্ধু যা বললেন তা খুবই
বুদ্ধির কথা বটে, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বেঁধে দিতে পারলে
আমাদের উদ্যোগ সফল হবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে—ওই
ঘণ্টাটা বিড়ালের গলায় বাঁধতে যাবে কে?
সভাপতির
কথায় বৈঠকের অন্যান্য ইঁদুর চুপ হয়ে গেল। কিন্তু ঘণ্টা বাঁধার উপায় হিসেবে কেউ
কোনো উত্তর দিতে পারল না। পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করেও উত্তর খুঁজে পেল না। আসলে
প্রস্তাব দেওয়া যত সহজ, তা বাস্তবে রূপায়িত করা এত সহজ নয়।
শিরোনাম
: একতার ক্ষমতা
এক
চাষির ছয় সন্তান। এক মেয়ে, পাঁচ ছেলে। ছেলেদের মধ্যে শান্তি ছিল না।
সব সময় ঝগড়া-ফ্যাসাদ লেগেই থাকত। এতে চাষির মনেও ছিল অশান্তি। ছেলেদের প্রতি তাঁর
উপদেশ-নির্দেশ কোনো কাজে এলো না। বৃদ্ধ বয়সে চাষি একদিন অনেক ভেবেচিন্তে ছেলেদের
বললেন—তোরা প্রত্যেকে একটা করে কঞ্চি নিয়ে
সেগুলো একসঙ্গে একটা আঁটি বেঁধে আমার কাছে নিয়ে আয়।
বাবার
কথায় ছেলেরা কঞ্চি জোগাড় করে তা নিয়ে একটা আঁটি বেঁধে আনল। এবার চাষি তাঁর ছেলেদের
বললেন—এবার তোরা প্রত্যেকে এই আঁটিটি ভাঙার
চেষ্টা কর, দেখি কে পারিস।
বাবার
কথায় ছেলেরা একে একে প্রত্যেকের কঞ্চির আঁটি ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো। চাষি
এবার আঁটিটি খুলতে বললেন। তারপর প্রত্যেকের হাতে একটা করে কঞ্চি দিলেন। ছেলেরা
বুঝতে পারল না তাদের বাবার আসল উদ্দেশ্য কী?
সবার হাতে কঞ্চি দেওয়ার পর
এবার চাষি তাঁর ছেলেদের বললেন—তোদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে কঞ্চি আছে
তো! এবার তোরা যার যার কঞ্চিটি ভেঙে ফেল। বাবার কথা শেষ হতে না হতেই ছেলেরা
প্রত্যেকে তাদের নিজের হাতের কঞ্চি পটাপট ভেঙে ফেলল। চাষি এবার তাঁর ছেলেদের
উদ্দেশে বললেন—দেখলি তো! তোরা যদি এভাবে মিলেমিশে একজোট
হয়ে থাকিস, তবে কোনো শত্রুই তোদের ক্ষতি করতে পারবে
না। কারণ একতার ক্ষমতা অনেক বেশি। আর যদি তোরা সব সময় ঝগড়া-বিবাদ করিস, আলাদা হয়ে থাকিস, একজন বিপদে পড়লে তার পাশে সবাই না দাঁড়াস, তাকে সাহায্য না করিস, তবে শত্রুরা তোদের একা পেয়ে ঘায়েল করে
দেবে।
শিরোনাম
: শক্তি পরীক্ষা
সূর্য
আর বাতাসের মধ্যে একদিন প্রচণ্ড তর্ক শুরু হলো। দুজনের মধ্যে কার শক্তি বেশি, এই ছিল তর্কের বিষয়। কেউ কারো কাছে হার মানতে চায় না বলে তর্কেরও শেষ হয় না।
শেষ পর্যন্ত দুজনেই বুঝতে পারল, এভাবে তর্ক চালিয়ে যাওয়া অর্থহীন। তাই কথা
কাটাকাটি থামিয়ে হাতে-কলমে শক্তি পরীক্ষার একটা উপায় বের করা দরকার। হঠাৎ বাতাসের
মাথায় একটা বুদ্ধির উদয় হলো, সে সূর্যকে উদ্দেশ্য করে বলল, ওই দেখো রাস্তা দিয়ে একটা লোক যাচ্ছে। যে ওই লোকটার শরীর থেকে জামা-কাপড়
খোলাতে পারবে সেই হবে বিজয়ী। যে বিজয়ী হবে তাকে বেশি শক্তিশালী বলে মেনে নিতে হবে।
দুজনের
মধ্যে ঠিক হলো, প্রথমে বাতাসই জামা খোলার চেষ্টা শুরু
করবে। শুরু হলো। বাতাস তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে বইতে শুরু করল। বাতাস বইতে শুরু
করলে লোকটা আরো ভালোভাবে গায়ে জামা-কাপড় জড়িয়ে নিল। বাতাস তার শক্তি আরো বাড়িয়ে
দিলেও কাজ হলো না। বাতাস আরো প্রস্তুতি নিয়ে এবার প্রবল জোরে বইতে শুরু করল।
ঠাণ্ডা বাতাসে লোকটার শরীর কাঁপছিল। এবার সে আগের পরা জামার ওপর আরো একটা মোটা কোট
পরে নিয়েছে। বাতাসের গতিবেগ থেকে রক্ষার জন্য লোকটি দুহাতে জামা-কাপড় চেপে ধরে
রেখেছে। বাতাস তো হতাশ। লোকটার শরীর থেকে জামা-কাপড় খোলা বাতাসের পক্ষে সম্ভব হলো
না। এবার সূর্য তার শক্তির পরিচয় দিতে শুরু করল। বাতাসের শীতল প্রবাহের পর সূর্যের
তাপে লোকটার বেশ আরাম বোধ হলো। আস্তে আস্তে সূর্যের উত্তাপ বাড়তে থাকলে লোকটা তার
গায়ের কোটটা খুলে ফেলল। উত্তাপ যখন প্রচণ্ড থেকে প্রচণ্ডতর হয়ে উঠল, তখন আর তার সহ্য হচ্ছিল না। একে একে সে গায়ের সব জামা-কাপড় খুলে গা ঠাণ্ডা
করতে পাশের এক নদীতে নেমে গেল। পরীক্ষায় প্রমাণিত হলো, বাতাসের চেয়ে সূর্যের শক্তি অনেক বেশি।
সংলাপ
রচনা
একুশে
বইমেলার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে দুই বন্ধুর সংলাপ
বিষয় :
অমর একুশে বইমেলা-২০১৫
ফরহাদ :
কী খবর মারুফ, কেমন আছিস?
মারুফ :
এই তো ভালো, তোর খবর কী? কাল
নাকি একুশে বইমেলায় গিয়েছিলি?
ফরহাদ :
হ্যাঁ, গিয়েছিলাম। আমি তো সারা বছরই এই মেলার
অপেক্ষায় থাকি।
মারুফ :
বাণিজ্য মেলায় যেতে বললাম গেলি না। এখন একা একাই বইমেলায় চলে গেলি।
ফরহাদ :
তুই তো জানিস, আমি শৈশব থেকেই বইপাগল, বইয়ে ডুব দিয়ে আমি পার করতে পারি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর অমর একুশে বইমেলায় একই
সঙ্গে বহু ও বিচিত্র ধরনের বইয়ের সমাবেশ ঘটে। সেখান থেকে আমি আমার পছন্দের বইটি
বেছে নিতে পারি, যা সচরাচর পাওয়া যায় না বা হয়ে ওঠে না।
মারুফ :
বর্তমানে দেশের এরূপ অসহিষ্ণু ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বইমেলা আয়োজনের যৌক্তিকতা
কতটুকু?
ফরহাদ :
আসলে আমাদের এরূপ অবস্থা থেকে উত্তরণে একমাত্র সহায়ক হতে পারে বই। কারণ বই মানুষকে
সুপথে চালিত করে; মানুষের চিন্তার প্রসার ঘটায়, তার অন্তরের কালিমা দূরীভূত করে আলোর পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। তা ছাড়া বই
মানুষের চরিত্র গঠনে ভূমিকা রাখে, সৎ ও কর্তব্যনিষ্ঠ হতে উৎসাহিত করে।
মারুফ :
তুই ঠিকই বলেছিস। আমার বাবাও বলেন, বই না পড়লে ভালো-মন্দের বোধ জাগ্রহ হয় না।
তো তুই মেলা কেমন দেখলি?
ফরহাদ :
এবার তো মেলার পরিসর বৃহৎ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করে
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত। যার ফলে প্রকাশকরা অধিকসংখ্যক স্টল সাজাতে পেরেছেন
এবং পাঠকরাও সর্বত্র ঘুরে ঘুরে তাদের পছন্দের বই বেছে নিতে পারছে। আমি বেশির ভাগ
স্টলেই গিয়েছি এবং বিশিষ্ট সাহিত্যিকসহ উদীয়মান লেখকদের বই দেখেছি। তা ছাড়া মেলায়
বিজ্ঞ-প্রাজ্ঞ সাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক ও বুদ্ধিজীবীদের উপস্থিতি দেখেছি। তাদের আলোচনা শুনেছি। যা আমার
চিন্তার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করেছে।
মারুফ :
একুশে বইমেলায় বই বিক্রি ছাড়া অন্য কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় কি?
ফরহাদ :
মেলায় বই বিক্রির পাশাপাশি মাসব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেমন—গান, কবিতা আবৃত্তি, প্রবন্ধ পাঠ, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, সাহিত্য সমালোচনা প্রভৃতি। তা ছাড়া থাকে নাট্যাভিনয়, নৃত্যগীত, গদ্য পাঠ এবং বিভিন্ন লেখকের বইয়ের
আলোচনা।
মারুফ :
মেলা থেকে কী কী বই কিনলি?
ফরহাদ :
বুদ্ধদেব বসু, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসসহ খ্যাতিমান ও উদীয়মান সাহিত্যিকদের বেশ কয়েকটি বই
কিনেছি। তবে সামনের সপ্তাহে গিয়ে আরো কয়েকটি বই কিনব।
মারুফ :
সামনের সপ্তাহে আমাকেও নিয়ে যাবি। তোর বর্ণনা শুনে আমারও যেতে ইচ্ছা করছে।
ফরহাদ : নিশ্চয়ই যাবি। আমরা দুই বন্ধু একসঙ্গে বইমেলায় গেলে
অনেক মজা হবে।
No comments:
Post a Comment